বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের আগে মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে ৩ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের একমি পেস্টিসাইডস ১০৫ কোটিতে উন্নিত হয়েছে। বাজারে আসার আগে এই দ্রুত উন্নতিকে অস্বাভাবিক মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। যে কারনে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনের আগে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার কথা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
কয়েক বছর ধরে শেয়ারবাজারে আইপিওতে আসার আগেই হঠাৎ করে পরিশোধিত মূলধন কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সমালোচনার মধ্যে রয়েছে। যে বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্নও রয়েছে। যেটার সত্যতা এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিষয়টিকে গুরুত্বারোপ করে। এ নিয়ে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিষ্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ভালো আইপিও দিতে গিয়ে কয়েকটি বিষয় যাচাই করি। এরমধ্যে কত সময়ের মধ্যে পরিশোধিত মূলধনের পরিবর্তন হয়েছে, সেটা অন্যতম। অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার আগে দ্রুত মূলধন বাড়ায়। যা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
যার ধারাবাহিকতায় গত ২৪ আগস্ট কোন কোম্পানি আইপিও আবেদনের পূর্ববর্তী দুই বছরে বোনাস শেয়ার ইস্যু ছাড়া অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারবে না বলে পাবলিক ইস্যু রুলসের সংশোধনীতে সংযুক্ত করা হয়েছে।
কিন্তু একমি পেস্টিসাইডসের শেয়ারবাজারে আসাকে কেন্দ্র করে বোনাস শেয়ারসহ প্লেসমেন্টে দ্রুত পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া রয়েছে বিতর্কিত শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ার রুপান্তর।
সম্প্রতি একটি কোম্পানির শেয়ার মানি ডিপোজিট নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। যার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদনও আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শেয়ার মানি ডিপোজিটবাবদ কোন অর্থ কোম্পানিতে জমা দেওয়া হয়নি বলে বিএসইসির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। যে কারনে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। সেরকম শেয়ার মানি ডিপোজিট একমি পেস্টিসাইডসেও আইপিওতে আসার আগে ছিল। যেগুলোকে আইপিওতে আবেদনের আগে শেয়ারে রুপান্তর করা হয়েছে। যেমনটি করা হয়েছিল ওই বিতর্কিত কোম্পানির ক্ষেত্রেও। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিক্রির টাকা বা অন্যকোন কারনে কোম্পানিতে ঢুকা অর্থকে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে দেখানো হয়েছিল। যার প্রকৃত ঘটনা এখন বেরিয়ে এসেছে।
একমি পেস্টিসাইডসের প্রসপেক্টাসের ২২ ও ২৩ পৃষ্টা অনুযায়ি, ১০৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের প্রায় পুরোটাই বা ৯৭ শতাংশ ইস্যু করা হয়েছে ২০১৯ সালের শেষার্ধে (১৫ জুন-৩০ ডিসেম্বর ১৯)। এরমধ্যে শেয়ার মানি ডিপোজিটের ৪৭ কোটি টাকা ছাড়াও নগদ ৩০ কোটি টাকা ও ২৫ কোটি টাকার বোনাস শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে। এরপরেও ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য শেয়ারবাজারে আসতে চাইছে।
আরও পড়ুন……
প্রতারক নিরীক্ষকের নিরীক্ষা দিয়ে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অপেক্ষায় একমি পেস্টিসাইডস
এ বিষয়ে জানতে একমি পেস্টিসাইডসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) সেলিম রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনি গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নানা তালবাহানা করেন। কিন্তু তারপরেও তিনি কোন মন্তব্য দেননি।
সেলিম রেজা গত ১৯ সেপ্টেম্বরে ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টে দেখা করতে বললেও ওইদিন কোন মন্তব্য না করে পরে জানাবেন বলে জানান। এরপরে ২৭ সেপ্টেম্বর একই প্রতিষ্ঠানে দুপুর ৩টায় যেতে বললেও তিনি ওইদিন দেখা করেননি। এরপরে কোম্পানিতে ২৮ সেপ্টেম্বর সাক্ষাত করতে বলেন। কিন্তু ওইদিন কোন মন্তব্য দেন না। তবে লিখিত পাঠিয়ে দেবেন বলে জানান। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাঠাননি।
উল্লেখ্য, একমি পেস্টিসাইডস ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৩ কোটি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। এজন্য কোম্পানিটির আইপিওতে ১২ অক্টোবর আবেদন গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হবে ১৮ অক্টোবর।
বিজনেস আওয়ার/০৭ অক্টোবর, ২০২১/আরএ
5 thoughts on “আইপিওর আগে ছয় মাসে ৩ কোটি থেকে একমি পেস্টিসাইডস ১০৫ কোটির কোম্পানি”